বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও থেকে: সরগরম হয়ে উঠেছে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা নির্বাচন। মেয়র, কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা কেউ বসে নেই। প্রার্থীরা তীব্র শীত উপেক্ষা করে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে ঘুরছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। ইতোমধ্যে পোষ্টারে পোষ্টারে ছেয়ে গেছে শহরের অলিগলি সর্বত্র। পাশাপাশি মাইকে গানের সুরে সুরে চলছে ভোট প্রার্থনা। মাইকের শব্দে প্রার্থীদের কান ঝালাপালা অবস্থা। সবমিলে উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্ঠি হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও পৌরসভা একটি প্রথম শ্রেনীর পৌরসভা।বিগত নির্বাচনে এখানে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছোটভাই মির্জা ফয়সাল আমীন। দীর্ঘ ৫ বছরে তিনি পৌরসভার তেমন কোন উন্নয়ন মূলক কাজ করতে না পারায় পৌরসভার বেশিরভাগ রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।এছাড়াও অনেক এলাকায় সড়ক বাতি না থাকায় রাতের বেলা শহরে সৃষ্টি হয় ভুতুড়ে অবস্থা। এছাড়াও ট্রাক স্ট্যান্ড না থাকায় রাস্তায় ট্রাক রাখায় শহরের পুরাতন বাস স্ট্যান্ড এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে যানজট। অনুমোদনহীন অটো বাইকের কারণে শহরে যানজট এখন নিত্যদিনের ঘটনা।
এখানে মেয়র পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করলেও প্রচারনার মাঠে রয়েছেন মূলত: ২জন।একজন আওয়ামীলীগ এবং অপরজন বিএনপি। মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা। মডেল পৌরসভা উপহার দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ২ মেয়র প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারনা চালাচ্ছেন। একদিকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আঞ্জুমান আরা বন্যা। তিনি সাধারণ ভোটারদের কাছে তেমন একটা পরিচিত নন। অপরদিকে বিএনপি মনোনীত শরিফুল ইসলাম শরীফ একজন ঠিকাদার এবং অর্থশালী। আঞ্জুমান আরা বন্যার সঙ্গে প্রচারনা চালাচ্ছেন আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ সহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কর্মীরা। এছাড়াও প্রচারনায় নেমেছেন নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশি অন্যান্যরাও। আঞ্জুমান আরা বন্যা মনোনয়ন পাওয়ায় প্রথমদিকে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা দেখা গেলেও নির্বাচনী মাঠে এখন সবাই সরব। তারা বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করছেন। নেতারা প্রার্থীকে দেখে নয়, উন্নয়নের স্বার্থে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন।
অপরদিকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শরিফুল ইসলাম শরীফ সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে ধানের শীষে ভোট প্রার্থনা করছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিএনপির দখলে রয়েছে এই পৌরসভা দাবিতে ভোট চাচ্ছেন তিনি। শরিফুল ইসলাম ঠিকাদার হওয়ায় নির্বাচনী প্রচারনায় তিনি এগিয়ে রয়েছেন। অন্যান্য প্রার্থীর চাইতে পোষ্টার ও মাইকের সংখ্যা তার বেশি। তাছাড়াও বিএনপি তাদের অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে এ নির্বাচনে জোর প্রচারনা চালাচ্ছেন।
আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আঞ্জুমান আরা বন্যা তার জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তিনি বলেন, বিগত ৫ বছর বিএনপির মেয়র হওয়ার কারণে এলাকার তেমন উন্নয়ন হয়নি। রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা। মানুষ ঠিকমতো চলাচল করতে পারছে না। একটু বুষ্টি হলেই রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। মানুষের বাড়িতেও পানি ওঠে। তাই সাধারণ মানুষ আমাকে ভোট দিতে চান। তাছাড়াও নতুন ভোটাররা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এলাকার উন্নয়নে নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য।
অপরদিকে শরিফুল ইসলাম শরীফ বলেন, সাধারণ মানুষের যেভাবে সাড়া পাচ্ছি তাতে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করব। নির্বাচিত হলে পৌরসভার বর্ধিত এলাকায় যেখানে নাগরিক সুবিধা পৌছেনি প্রথমে সেখানে কাজ করব।
সাধারণ ভোটাররা জানান, আমাদের প্রত্যাশার জায়গা হলো শহরের রাস্তাঘাট গুলো ভাল থাকবে, সুন্দর ড্রেনেজ সিষ্টেম থাকবে, শহরের বাতিগুলো সন্ধা হলেই জ্বলে উঠবে। সেই সাথে নাগরিক সুবিধার ক্ষেত্রে সেবার মান যেন ভাল হয় এবং পৌরসভায় গিয়ে যেন ভাল ব্যবহার পায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে। এছাড়াও যারা মানুষের বিপদে আপদে পাশে এসে দাঁড়াবে এমন প্রার্থী আমরা চাই।
এ পৌরসভায় মেয়র প্রার্থী ৩জন, কাউন্সিলর প্রার্থী ৫৯জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। মোট ভোটার ৬০ হাজার ৭২৭ জন। পুরুষ ২৯ হাজার ৭১২ এবং নারী ভোটার ৩১ হাজার ১৫ জন।
এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো: জিলহাজ উদ্দীন জানান, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী ৪র্থ ধাপে এ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।প্রার্থীরা তাদের প্রচারনা কার্যক্রম চালাচ্ছে। প্রার্থীরা উৎসব মুখর পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারনা চালাচ্ছেন।ইতোমধ্যে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী সেল, ভিজিলেন্স ও অবজারভেশন টিম, মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। প্রার্থীদের নিয়ে আবারো মতবিনিময় সভা ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষন ও মগ ভোটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি অত্যন্ত ভাল। আশা করা যায়, সকলের সহযোগিতা নিয়ে একটি সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন আমরা উপহার দিতে পারব।